শিরোনাম
Passenger Voice | ১২:৩৫ পিএম, ২০২১-১১-১০
ভাড়া বাড়িয়ে প্রত্যাহার করা হয়েছে তিন দিনের পরিবহন ধর্মঘট। তাই বেশি ভাড়া দিয়েই বাসে চলতে হয়েছে যাত্রীদের। যতবার ভাড়া ভাড়ানো হয়েছে, ততবারই পরিবহন মালিকদের দৌরাত্ম্য প্রত্যক্ষ করেছেন যাত্রীসাধারণ। এবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর ‘অতিরিক্ত ভাড়া নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার’ হুশিয়ারি সত্ত্বেও নিবৃত্ত হননি পরিবহন শ্রমিকরা।
অন্য সব প্রজ্ঞাপনের মতো রোববার জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে জারিকৃত এ ভাড়ার হার ৮ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। কতটা জনস্বার্থে তাও বিবেচনায় নিতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর ভাড়া বাড়বে, এটিই নিয়ম। কিন্তু এখানে নিয়ম মানা হয় না বলেই বারবার প্রতীয়মান হয়।
রাজধানীর জন্য করা সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুযায়ী, রাজধানীর যত মানুষ বাস-মিনিবাসে যাতায়াত করে, তার ৪০ শতাংশই কম দূরত্বের পথে, তিন কিলোমিটারের মধ্যে। বাস্তবতা হলো, সর্বনিম্ন ভাড়াই বেড়েছে সবচেয়ে বেশি; ৫০ শতাংশ। মিনিবাসের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করা হলেও নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা।
অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে বাস ভাড়া নির্ধারণে যুক্তির চেয়ে পরিবহন মালিকদের স্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাস ভাড়া নির্ধারণে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’। ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় বাসের দাম ৩৫ লাখ টাকা ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। বাস কেনায় ব্যাংকঋণের সুদ ধরা হয়েছে সাড়ে ১০ লাখ টাকা। বছরে রক্ষণাবেক্ষণ ও ইঞ্জিন ওভারহোলিং ব্যয় ৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। খরচ না থাকলেও বিমা ও টোল চার্জ বছরে ৭৫ হাজার টাকা। প্রতি মাসে টায়ার-টিউব বদল ও দুর্ঘটনায় ক্ষতি ৬৫ হাজার টাকা। গাড়ি রাখা হয় রাস্তায়। অথচ গ্যারেজ ভাড়া ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা।
বর্তমান সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী, নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় করলে সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু দণ্ড কার্যকরের দৃষ্টান্ত খুব কম।
ভাড়া নির্ধারণে বাস-মিনিবাসের ১২টি বিষয় ও বিনিয়োগ বিবেচনা করে বিআরটিএ। এর মধ্যে বাস কেনা, এর আয়ুষ্কাল, যাত্রী আসন ও আসন অনুযায়ী যাত্রী পাওয়ার হার বিবেচনায় নেয়া হয়। গত রোববার অনুষ্ঠিত বৈঠকে দূরপাল্লা ও রাজধানীতে চলাচলকারী বাসের আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১০ বছর। অথচ ঢাকায় ২০ বছর বয়স পর্যন্ত বাস চলতে দেয়া হয়। বেশিরভাগ বাসই লক্কড়ঝক্কড়।
ব্যয় নির্ধারণে বাসের সাজসজ্জার ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ বছরে এক দফায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা। অথচ রাজধানীর বেশিরভাগ বাসই রংচটা, জীর্ণ এবং অনেক গাড়িতেই ভাঙা কাচ। প্রতি লিটার ডিজেলে আড়াই কিলোমিটার চলে ধরে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ কোনো দিনই এ নিয়ে সমীক্ষা করেনি।
ব্যয় না করেও ব্যয় দেখিয়ে ভাড়া বৃদ্ধি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকৃত ব্যয় দেখিয়ে হলে ভাড়া এত বেশি বাড়াতে হতো না। প্রকৃত ব্যয় দেখিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে ভাড়া নির্ধারণ করলেই তা যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত হবে। তবেই নিরাপদ, সুশৃঙ্খল, পরিবেশবান্ধব সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2024 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.